4:54 pm, Sunday, 22 June 2025

সংস্কারের মাধ্যমে সুরাহা হওয়া দরকার

প্রশাসনে কেন এত ক্যাডারের প্রয়োজন:
জনপ্রশাসনে প্রতিনিয়ত ক্যাডার সার্ভিস বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করেন তারাই সবচেয়ে ভালো ক্যাডার কর্মকর্তা। অনেক আগে ক্যাডার কমানোর বিষয়টি উপস্থাপন করা হলেও তা আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। সে কারণে এখনও ক্যাডার নিয়ে বিক্ষোভ দানা বেঁধে আছে।
বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের ভবিষ্যৎ গড়া বিষয়ে গভীর দৃষ্টিতে দেখা জরুরি। যেখানে দেশের ক্যাডার ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। বর্তমানে দেশে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে, যার মধ্যে ১০টি সাধারণ, ৫টি সাধারণ ও পেশাগত এবং ১১টি পুরোপুরি কারিগরি ও পেশাগত। এই বিভাজন ও সংখ্যাগত বৈচিত্র্য দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে জটিল করে তুলেছে। যা দেশের উন্নয়ন ও জনসেবার জন্য এক ধরনের অপ্রয়োজনীয় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এত ক্যাডার থাকা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করলে- যা প্রায় অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। ভারতের মতো দেশেও সাধারণত তিনটি প্রধান সার্ভিস- ইউপিএসসি, আইএএস, আইএফএস- প্রধানত নিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে এখন ২৬ ক্যাডারের মধ্যে এমন অনেক ক্যাডার রয়েছে, যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে- এসব ক্যাডার কমিয়ে আনা উচিত। তাদের বিভাজন করে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন সার্ভিস গঠন করা প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দেখা গেছে, বিদ্যমান ক্যাডার সংখ্যা ১৩টিতে বিভক্ত করে, তিনটি পৃথক পিএসসি গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নিয়োগ ও পদোন্নতির স্বচ্ছতা বাড়বে, বিশেষায়িত জনবল গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে প্রতিভাবান কর্মকর্তাদের দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব হবে, যা দেশের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই পরিবর্তন কতটা বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। কিছু সাবেক সচিব ও বিশ্লেষক মনে করেন, এ ধরনের সংস্কার দেশের জন্য সুবিধাজনক ও প্রয়োজনীয়। তারা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে সচিবালয়ে সব ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, ফলে বৈষম্য কমে যাবে। পাশাপাশি বিশেষায়িত ক্যাডার যেমন চিকিৎসা, প্রকৌশল, কৃষি ইত্যাদিতে দক্ষ জনবল গড়ে উঠবে। যা দেশের স্বাভাবিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
অনেক দেশেই ক্যাডার ব্যবস্থা নেই। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে সাধারণত তিনটি প্রধান সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়োগ হয়। সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া কঠোর ও স্বচ্ছ এবং বিভিন্ন ক্যাডার বা সার্ভিসের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমতা বজায় থাকে। বাংলাদেশের জন্যও এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ রয়েছে, যা দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলবে। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র সচিবরা বলছেন, দেশের প্রশাসনে সংস্কার প্রয়োজন, তবে তা রাজনৈতিক ইচ্ছা ও রাজনৈতিক দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে প্রশাসনিক সার্ভিসের মানোন্নয়ন, নিয়োগের স্বচ্ছতা ও কর্মচারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য দরকার কঠোর মানদণ্ড, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
বাংলাদেশের জন্য জরুরি হলো এমন একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে কর্মচারীর সুযোগ-সুবিধা, উন্নয়ন ও দায়িত্বের মধ্যে সমতা থাকবে। ক্যাডার প্রথা থাকুক বা না থাকুক, মূল কথা হলো, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব প্রশাসন তৈরি করা। এর জন্য প্রয়োজন সংস্কার, প্রশিক্ষণ ও দায়িত্বের যথাযথ বিকেন্দ্রীকরণ, যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানীর কেন্দ্রীয় দফতর- সবখানেই কার্যকর ও মানবিক সেবা পৌঁছায়। অতএব বিষয়টি সময়ের প্রেক্ষিত দেখা দরকার, যেন এই ক্যাডার ব্যবস্থা নতুন দৃষ্টিতে গড়ে ওঠে, যেখানে দেশের উন্নয়ন ও জনসেবার মূল চেতনায় পরিবর্তন আসে। কারণ আধুনিক, স্বচ্ছ ও দক্ষ প্রশাসনই হলো একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সংস্কারের মাধ্যমে সুরাহা হওয়া দরকার

Update Time : 10:28:06 am, Sunday, 8 June 2025
প্রশাসনে কেন এত ক্যাডারের প্রয়োজন:
জনপ্রশাসনে প্রতিনিয়ত ক্যাডার সার্ভিস বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা মনে করেন তারাই সবচেয়ে ভালো ক্যাডার কর্মকর্তা। অনেক আগে ক্যাডার কমানোর বিষয়টি উপস্থাপন করা হলেও তা আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। সে কারণে এখনও ক্যাডার নিয়ে বিক্ষোভ দানা বেঁধে আছে।
বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের ভবিষ্যৎ গড়া বিষয়ে গভীর দৃষ্টিতে দেখা জরুরি। যেখানে দেশের ক্যাডার ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। বর্তমানে দেশে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে, যার মধ্যে ১০টি সাধারণ, ৫টি সাধারণ ও পেশাগত এবং ১১টি পুরোপুরি কারিগরি ও পেশাগত। এই বিভাজন ও সংখ্যাগত বৈচিত্র্য দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে জটিল করে তুলেছে। যা দেশের উন্নয়ন ও জনসেবার জন্য এক ধরনের অপ্রয়োজনীয় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য এত ক্যাডার থাকা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করলে- যা প্রায় অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। ভারতের মতো দেশেও সাধারণত তিনটি প্রধান সার্ভিস- ইউপিএসসি, আইএএস, আইএফএস- প্রধানত নিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে এখন ২৬ ক্যাডারের মধ্যে এমন অনেক ক্যাডার রয়েছে, যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে- এসব ক্যাডার কমিয়ে আনা উচিত। তাদের বিভাজন করে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন সার্ভিস গঠন করা প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে দেখা গেছে, বিদ্যমান ক্যাডার সংখ্যা ১৩টিতে বিভক্ত করে, তিনটি পৃথক পিএসসি গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নিয়োগ ও পদোন্নতির স্বচ্ছতা বাড়বে, বিশেষায়িত জনবল গড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে প্রতিভাবান কর্মকর্তাদের দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব হবে, যা দেশের প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এই পরিবর্তন কতটা বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। কিছু সাবেক সচিব ও বিশ্লেষক মনে করেন, এ ধরনের সংস্কার দেশের জন্য সুবিধাজনক ও প্রয়োজনীয়। তারা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে সচিবালয়ে সব ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে, ফলে বৈষম্য কমে যাবে। পাশাপাশি বিশেষায়িত ক্যাডার যেমন চিকিৎসা, প্রকৌশল, কৃষি ইত্যাদিতে দক্ষ জনবল গড়ে উঠবে। যা দেশের স্বাভাবিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
অনেক দেশেই ক্যাডার ব্যবস্থা নেই। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোতে সাধারণত তিনটি প্রধান সার্ভিসের মাধ্যমে নিয়োগ হয়। সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া কঠোর ও স্বচ্ছ এবং বিভিন্ন ক্যাডার বা সার্ভিসের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমতা বজায় থাকে। বাংলাদেশের জন্যও এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ রয়েছে, যা দেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলবে। এ ক্ষেত্রে সিনিয়র সচিবরা বলছেন, দেশের প্রশাসনে সংস্কার প্রয়োজন, তবে তা রাজনৈতিক ইচ্ছা ও রাজনৈতিক দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে প্রশাসনিক সার্ভিসের মানোন্নয়ন, নিয়োগের স্বচ্ছতা ও কর্মচারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য দরকার কঠোর মানদণ্ড, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
বাংলাদেশের জন্য জরুরি হলো এমন একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে কর্মচারীর সুযোগ-সুবিধা, উন্নয়ন ও দায়িত্বের মধ্যে সমতা থাকবে। ক্যাডার প্রথা থাকুক বা না থাকুক, মূল কথা হলো, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব প্রশাসন তৈরি করা। এর জন্য প্রয়োজন সংস্কার, প্রশিক্ষণ ও দায়িত্বের যথাযথ বিকেন্দ্রীকরণ, যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানীর কেন্দ্রীয় দফতর- সবখানেই কার্যকর ও মানবিক সেবা পৌঁছায়। অতএব বিষয়টি সময়ের প্রেক্ষিত দেখা দরকার, যেন এই ক্যাডার ব্যবস্থা নতুন দৃষ্টিতে গড়ে ওঠে, যেখানে দেশের উন্নয়ন ও জনসেবার মূল চেতনায় পরিবর্তন আসে। কারণ আধুনিক, স্বচ্ছ ও দক্ষ প্রশাসনই হলো একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি।