4:52 pm, Sunday, 22 June 2025

অর্থনীতিতে ফলপ্রসূ প্রভাব পড়বে

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সম্ভাবনা দেখছে অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার। আগামী শনিবার চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ের নেতৃত্বে ১৫০ জনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে। যা দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। গত মার্চে চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শীর্ষ চীনা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তার সরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা ও একটি বাণিজ্য করিডোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সফর শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নই নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এক নতুন সুযোগের দরজা খুলে যাবে।
চীনের এই ব্যবসায়ী দলের আগমনে বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে উৎপাদনমুখী খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়লে দেশের কর্মসংস্থান বাড়বে, অর্থনীতি জোরদার হবে এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। এ জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য বিনিয়োগ কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সচেষ্ট রয়েছে। চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে এসে সরেজমিন বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত সেমিনারে অংশ নেবেন, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করবে।
বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে নতুন অস্থিরতা। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও আমদানি-রফতানি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেক দেশ তাদের উৎপাদন কেন্দ্র অন্যত্র স্থানান্তর করতে আগ্রহী। চীন যেহেতু এই পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দু। তাই বাংলাদেশ এ পরিস্থিতি থেকে সুবিধা নিতে পারে। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এই সুযোগে বাংলাদেশকে চীনের ব্যবসায়ীরা একটি  সুবিধাজনক স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তারা যদি বাংলাদেশে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেন, তা হলে তাদের খরচ কমে আসবে, তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও জোরদার হবে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব দ্রুত বিভিন্ন সংস্কার ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন, সহজ শুল্ক, শ্রম সম্পর্কের সংস্কার ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া চলমান। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে চীনা কোম্পানিগুলোর আগ্রহ চট্টগ্রাম ও মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে দৃশ্যমান আধুনিক অবকাঠামো ও সুবিধা রয়েছে। এর  ফলে বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারি উৎপাদন, সৌরবিদ্যুৎ ও অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তির খাতে বিনিয়োগের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তারা।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। দেশের বেশ কিছু অবকাঠামোতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চীন বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেয়। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশে বিশেষ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করবে। মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পেও চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশিত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর ও ইতিবাচক প্রভাবের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই স্থিতিশীল ও বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক টানাপড়েন বা অব্যবস্থাপনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে এই সম্ভাবনাগুলো ক্ষুণ্ন হতে পারে । তাই অবকাঠামো উন্নয়ন, সঠিক নীতিমালা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতায় বাংলাদেশ যদি সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এর ফলাফল হবে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

অর্থনীতিতে ফলপ্রসূ প্রভাব পড়বে

Update Time : 10:33:07 am, Sunday, 8 June 2025
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সম্ভাবনা দেখছে অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার। আগামী শনিবার চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ের নেতৃত্বে ১৫০ জনের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে। যা দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। গত মার্চে চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শীর্ষ চীনা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তার সরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় সুবিধা ও একটি বাণিজ্য করিডোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সফর শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নই নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এক নতুন সুযোগের দরজা খুলে যাবে।
চীনের এই ব্যবসায়ী দলের আগমনে বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে উৎপাদনমুখী খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়লে দেশের কর্মসংস্থান বাড়বে, অর্থনীতি জোরদার হবে এবং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। এ জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য বিনিয়োগ কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত করতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সচেষ্ট রয়েছে। চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে এসে সরেজমিন বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত সেমিনারে অংশ নেবেন, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করবে।
বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে সৃষ্টি হয়েছে নতুন অস্থিরতা। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও আমদানি-রফতানি ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেক দেশ তাদের উৎপাদন কেন্দ্র অন্যত্র স্থানান্তর করতে আগ্রহী। চীন যেহেতু এই পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দু। তাই বাংলাদেশ এ পরিস্থিতি থেকে সুবিধা নিতে পারে। চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে। এই সুযোগে বাংলাদেশকে চীনের ব্যবসায়ীরা একটি  সুবিধাজনক স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন। তারা যদি বাংলাদেশে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেন, তা হলে তাদের খরচ কমে আসবে, তাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিও জোরদার হবে।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব দ্রুত বিভিন্ন সংস্কার ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন, সহজ শুল্ক, শ্রম সম্পর্কের সংস্কার ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া চলমান। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে চীনা কোম্পানিগুলোর আগ্রহ চট্টগ্রাম ও মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে দৃশ্যমান আধুনিক অবকাঠামো ও সুবিধা রয়েছে। এর  ফলে বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারি উৎপাদন, সৌরবিদ্যুৎ ও অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তির খাতে বিনিয়োগের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তারা।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব রয়েছে। দেশের বেশ কিছু অবকাঠামোতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চীন বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেয়। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশে বিশেষ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করবে। মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পেও চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশিত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর ও ইতিবাচক প্রভাবের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই স্থিতিশীল ও বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক টানাপড়েন বা অব্যবস্থাপনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে এই সম্ভাবনাগুলো ক্ষুণ্ন হতে পারে । তাই অবকাঠামো উন্নয়ন, সঠিক নীতিমালা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতায় বাংলাদেশ যদি সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে পারে, তবে ভবিষ্যতে এর ফলাফল হবে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের।