বিগত ফ্যাস্টিট সরকারের সময় দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার একটি উচ্চ পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছে। একই সঙ্গে টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. এইচ আহসান মনসুর বিদেশ সফর করে এসেছেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়াকরণ।
অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে শেখ পরিবার ছাড়াও রয়েছে ১০টি প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী। ইতিমধ্যে সরকার প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ জব্দ করেছে। গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার টাস্কফোর্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। আর এই বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রেস বিফ্রিং করেছেন। আর বিফ্রিংয়ের বিষয়টি গতকাল মঙ্গলবার সময়ের আলো পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গেছে, ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার সম্পদ অ্যাটাচমেন্টে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ও ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশে ২৫৩ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি তহবিল গঠন করা হবে। তহবিল গঠনের জন্য প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হবে। অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে এই তহবিলের টাকা কীভাবে ব্যয় করা হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তার বিফ্রিংয়ে বেশ স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছেন। আর তা হলো- যেসব ব্যাংক ক্ষতির শিকার হয়েছে, তাদের সেই ক্ষতিপূরণের জন্য এই তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হবে। যেন ব্যাংকগুলো লাভের মুখ দেখে, বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন না হতে হয়। এ কথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমানে অনেক ব্যাংক নিজের মতো চলতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, তাদের ব্যাংক থেকে অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে পাচার করা অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলোর ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি জনহিতকর কাজে লাগানো যেতে পারে। এর ফলে দেশের একদিকে যেমন দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের প্রাণ ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রচুর। পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা খুব দ্রুত সম্ভব নয়, সে কথা গভর্নর নিজেই স্বীকার করেছেন। এরপরও চেষ্টার কোনো ক্রটি রাখছে না।
টাকা ফেরত আনার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে ফেরত আসা টাকা যেন কোনো ধরনের নয়ছয় না হয়, সে ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। একই সঙ্গে যারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তাদের ব্যাপারেও কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। শুধু সম্পত্তি জব্দ করলেই হবে না। আগামীতে কেউ যেন দেশের টাকা বিদেশ পাচার করতে না পারে সে ব্যাপারে শক্ত আইন প্রণয়ন জরুরি। কারণ এ কথা কারও অজানা নয় যে, দেশের অর্থনীতি চাঙা করার ক্ষেত্রে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।