দীর্ঘদিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও সিলেট জলাবদ্ধতার মারাত্মক সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে চলতি বর্ষাকালে নিম্নচাপ ও অব্যাহত ভারী বর্ষণের ফলে ঢাকার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক, বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই জলাবদ্ধতা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় নোংরা জলাধার সৃষ্টির ফলে চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাসিন্দারা উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের পণ্যে পানি ঢুকে বিপুল আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। দোকান, মার্কেট, সুপারশপ ও অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে থাকায় বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতি আরও বড় হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সড়ক ও যানবাহন চলাচলের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। পানির কারণে অসংখ্য ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা বিকল হয়ে রাস্তায় থেমে গেছে। যানজট ও চলাচলের ব্যাঘাতের কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও খাল নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় জলাবদ্ধতা আরও প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- নিষ্কাশনের পথগুলো পলিথিন, বর্জ্যে জ্যাম হওয়ায় পানি সরে যেতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা আরও বেড়েছে।
নিউমার্কেট, মিরপুর, খিলগাঁও, বাসাবো, ভাসানটেক, মান্ডা, রামপুরা, কালশীসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো এখনও পানিতে ডুবে রয়েছে। নিউমার্কেটে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে থাকায় সাধারণ পথচারী ও ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দোকানপাট পানির নিচে থাকায় পণ্য ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় দোকান ও মার্কেটের কর্মীরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির কারণে তাদের ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে ক্রেতা নেই বললেই চলে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, পানিপ্রবাহের জন্য নতুন পথ তৈরি ও পুরোনো পথে সংস্কারকাজ চললেও বাস্তবায়ন ধীরগতি এবং পরিকল্পনার অভাবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। অব্যাহত জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান না থাকায় এই পরিস্থিতি চলতেই থাকবে বলে তারা স্বীকার করেছেন।
অতিরিক্ত বর্ষণের ফলে কালশীর উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নেওয়া বস্তিবাসী পানিতে ডুবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি সহ্য করছেন। রাতের বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা উড়ালসড়কের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই পরিস্থিতি মানবিক ও সামাজিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা শুধু সাময়িক দুর্ভোগ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এর জন্য সরকারি উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা জরুরি। জলাবদ্ধতা নিরসনে অবকাঠামো উন্নয়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ ও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে এই জলাবদ্ধতা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে, যা আমাদের নগর জীবন ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের- যাতে নগরবাসীর জীবন ও সম্পদ নিরাপদ থাকে।