6:05 pm, Sunday, 22 June 2025

কম খরচে বিয়ে করলে যে বরকত পাবেন

বিয়ে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অংশ। বৈবাহিক জীবন মানুষকে স্বস্তি ও শান্তির সন্ধান দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে সে জাতির জন্য, যারা চিন্তা করে। (সূরা রুম, আয়াত : ২১)

রাসূল (সা.) প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকদের বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। যারা বিয়ে থেকে বিমুখ থাকতে চায় এবং একাকী জীবন কাটিয়ে দিতে চায় তাদের এমন জীবনযাপনে অনুৎসাহিত করেছেন বিভিন্ন হাদিসে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন —

‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে— যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। (সূরা নুর, আয়াত : ৩২-৩৩)

এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কয়েকজন যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে। (বুখারি, হাদিস, ৪৬৯৩)

কোরআনের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে একথা সহজেই বুঝে আসে, স্বস্তি, শান্তি ও পবিত্র জীবনযাপনের অন্যতম মাধ্যম বিয়ে। বর্তমানে বিয়ের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়টি অনেকাংশে কঠিন হয়ে গেছে লৌকিকতা ও সামাজিকতা রক্ষার আড়ালে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জমকালো খরচ, বরের ক্যারিয়ার যাচাই— এসব বিয়েকে কঠিন করে দিয়েছে।

ছেলেদের ওপর যেহেতু সংসার পরিচালনার দায়িত্ব থাকে তাই ছেলের উপার্জন, ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবেই সময় চলে যায় অভিভাবকদের। অথচ সূরা নুরের ৩২ ও ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, কারো সচ্ছলতা না থাকলে তিনি নিজেই সচ্ছলতা দিয়ে দেবেন বিয়ের পরে।

বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ, যৌতুক নিয়ে মানুষ যতটা ভেবে থাকে সেই তুলনায় স্বামীর কাছ থেকে কনের পাওনা দেন-মোহর নিয়ে তেমন ভাবনা নেই কারো মাঝে। বিয়েতে দেন-মোহর নামমাত্র ধরা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিশাল অংক নির্ধারণ করলেও তা আদায় করা হয় না। অথচ দেন-মোহর পরিশোধ না করে কোনো পুরুষ মারা গেলে তিনি পরকালে ব্যভিচারীর কাতারে দাঁড়াবেন।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনও নারীকে বিয়ে করলো এবং তার মোহর বাকি রাখলো এরপর সে ইচ্ছা করলো মোহর আংশিক বা একেবারেই আদায় করবে না তাহলে সে ব্যভিচারী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সঙ্গে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। (ইসলাহে ইনকিলাব, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা , ১২৭, কানজুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪৮)

বিয়েতে অন্য সব বিষয়ের তুলনায় নারীর ন্যায্য অধিকার দেন-মোহরের বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া জরুরি। একই সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের প্রথম ধাপ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাকে লৌকিকতামুক্ত রাখা অপরিহার্য। জমকালো অনুষ্ঠানের বিপরীতে সহজেই এবং অনাড়ম্বরভাবে যেসব বিয়ে হয় তাতেই বরকত রয়েছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম  বিয়ে হলো যা খরচের দিক থেকে সহজসাধ্য হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৯)

আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৫২৯)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভধারণ সহজ হওয়া।’ (সহিহুল জামে: ২২৩৫)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

কম খরচে বিয়ে করলে যে বরকত পাবেন

Update Time : 10:12:25 am, Sunday, 8 June 2025

বিয়ে একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অংশ। বৈবাহিক জীবন মানুষকে স্বস্তি ও শান্তির সন্ধান দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে সে জাতির জন্য, যারা চিন্তা করে। (সূরা রুম, আয়াত : ২১)

রাসূল (সা.) প্রাপ্ত বয়স্ক যুবকদের বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। যারা বিয়ে থেকে বিমুখ থাকতে চায় এবং একাকী জীবন কাটিয়ে দিতে চায় তাদের এমন জীবনযাপনে অনুৎসাহিত করেছেন বিভিন্ন হাদিসে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন —

‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে— যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। (সূরা নুর, আয়াত : ৩২-৩৩)

এক হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কয়েকজন যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে। (বুখারি, হাদিস, ৪৬৯৩)

কোরআনের আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে একথা সহজেই বুঝে আসে, স্বস্তি, শান্তি ও পবিত্র জীবনযাপনের অন্যতম মাধ্যম বিয়ে। বর্তমানে বিয়ের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়টি অনেকাংশে কঠিন হয়ে গেছে লৌকিকতা ও সামাজিকতা রক্ষার আড়ালে। বিয়ের অনুষ্ঠানের জমকালো খরচ, বরের ক্যারিয়ার যাচাই— এসব বিয়েকে কঠিন করে দিয়েছে।

ছেলেদের ওপর যেহেতু সংসার পরিচালনার দায়িত্ব থাকে তাই ছেলের উপার্জন, ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবেই সময় চলে যায় অভিভাবকদের। অথচ সূরা নুরের ৩২ ও ৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, কারো সচ্ছলতা না থাকলে তিনি নিজেই সচ্ছলতা দিয়ে দেবেন বিয়ের পরে।

বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ, যৌতুক নিয়ে মানুষ যতটা ভেবে থাকে সেই তুলনায় স্বামীর কাছ থেকে কনের পাওনা দেন-মোহর নিয়ে তেমন ভাবনা নেই কারো মাঝে। বিয়েতে দেন-মোহর নামমাত্র ধরা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিশাল অংক নির্ধারণ করলেও তা আদায় করা হয় না। অথচ দেন-মোহর পরিশোধ না করে কোনো পুরুষ মারা গেলে তিনি পরকালে ব্যভিচারীর কাতারে দাঁড়াবেন।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনও নারীকে বিয়ে করলো এবং তার মোহর বাকি রাখলো এরপর সে ইচ্ছা করলো মোহর আংশিক বা একেবারেই আদায় করবে না তাহলে সে ব্যভিচারী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সঙ্গে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। (ইসলাহে ইনকিলাব, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা , ১২৭, কানজুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪৮)

বিয়েতে অন্য সব বিষয়ের তুলনায় নারীর ন্যায্য অধিকার দেন-মোহরের বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া জরুরি। একই সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের প্রথম ধাপ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাকে লৌকিকতামুক্ত রাখা অপরিহার্য। জমকালো অনুষ্ঠানের বিপরীতে সহজেই এবং অনাড়ম্বরভাবে যেসব বিয়ে হয় তাতেই বরকত রয়েছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম  বিয়ে হলো যা খরচের দিক থেকে সহজসাধ্য হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৯)

আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৫২৯)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভধারণ সহজ হওয়া।’ (সহিহুল জামে: ২২৩৫)