5:20 pm, Sunday, 22 June 2025

শুধু প্রেজেন্টেশন নয়, কাজও চলছে : আশিক চৌধুরী

সরকারের বর্তমান মেয়াদ প্রায় দশ মাস। এর মধ্যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে নীতিগত সংস্কার ও নানামুখী বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানিয়েছেন, ‘শুধু প্রেজেন্টেশন নয়, কাজও চলছে’। তিনি এক স্ট্যাটাসে বিডা–বেজার গত আট মাসের কার্যক্রম তুলে ধরেছেন, যেটিকে তিনি ‘আমলনামা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

শুক্রবার (৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ স্টাটাস দেন তিনি।

চৌধুরী আশিক বলেন, আমরা তিনটি মূল খাতে কাজ করছি—নীতিমালা ও বাস্তবায়ন, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান এবং দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন ও বিনিয়োগ পাইপলাইন গঠন।

তিনি জানান, দেশি-বিদেশি দুই শতাধিক উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহীর (সিইও) মতামতের ভিত্তিতে ৩০টি পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ১৮টি কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এগিয়ে আছে, ৭টি কাজ সময়ানুযায়ী এগোচ্ছে এবং ৫টিতে কিছুটা পিছিয়ে আছে।

প্রতিটি কাজের অগ্রগতি জানাতে বিডা প্রতি দুই মাসে ‘স্টেট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট’ নামে ওয়েবিনার করে থাকে। এসব ওয়েবিনারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অগ্রগতির তথ্য ভাগাভাগি করা হয়।

স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ইতিমধ্যে ৫টি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামোর রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে। পরিত্যক্ত জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর পাশাপাশি সামরিক খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি ডিফেন্স ইকোনমিক জোন চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে চালু হয়েছে মাসিক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক, ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের কার্যক্রম, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এফডিআই হিটম্যাপ এবং স্টার্টার প্যাক সুবিধা। বিডায় রিসার্চ উইং, ডিজিটাল ইনভয়েসিং, গ্রিন চ্যানেল, ওয়ান স্টপ সার্ভিস পারফরম্যান্স ডেটা প্রকাশসহ মোট ১৮টি কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

DP
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক-এর ফেসবুক পোস্টের অংশবিশেষ

অগ্রগতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের বিডা অফিসে স্থাপন, ব্যবসায়ীদের জন্য ফোকাল পারসন নির্ধারণ, কর্মীদের জন্য ডে-কেয়ার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আধুনিক ক্যান্টিন সুবিধা, বিডার নতুন ওয়েবসাইট ও কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজির উন্নয়ন করা হয়েছে।

তবে কিছু খাতে বিডা পিছিয়ে রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন নির্বাহী চেয়ারম্যান। এর মধ্যে রয়েছে প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল গঠন, ট্যাক্স রুল সংস্কার, ক্যাপিটাল রিপ্যাট্রিয়েশন নীতি পরিবর্তন, বিডার সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে সমন্বিত কৌশল তৈরি।

চৌধুরী আশিক মনে করেন, দেশের বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্টি ও আস্থা অর্জন নতুন বিনিয়োগ টানার অন্যতম প্রধান উপাদান। বিগত মাসগুলোতে ইয়ংওয়ান গ্রুপ, মেটলাইফ, শেভ্রন, লাফার্জ ও বাংলাদেশ অটোমোবাইলস–এর মতো প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধানে কাজ করেছে বিডা।

নীতিগত সংস্কারের উদাহরণ হিসেবে তিনি ফুল ও পারশিয়াল বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স পলিসি, ম্যান-মেড ফাইবারে শুল্ক হ্রাস এবং ‘নো ডিডাকশন সার্টিফিকেট’ জারি প্রক্রিয়া সহজ করার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ইতিমধ্যে বিডা দুটি বিনিয়োগ সম্মেলন করেছে—একটি বৈশ্বিক, আরেকটি চীনকেন্দ্রিক। এতে ৬৭৫ জন বিনিয়োগকারী অংশ নেন এবং ৩০০টির বেশি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলাফল হিসেবে একটি গার্মেন্ট কারখানা, একটি এয়ারলাইন্স অ্যামেনিটি কিট প্রস্তুতকারক এবং একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে।

বিডার দাবি, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া আরও ১৫টি প্রকল্প শিগগির চূড়ান্ত হতে পারে।

সামগ্রিক মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করে চৌধুরী আশিক বলেন, আমরা যেটুকু করেছি, সেটি দলগত প্রচেষ্টার ফসল। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি, বিদেশি দূতাবাস ও কিছু প্রাইভেট খাতের অংশীদারদের বিনা পারিশ্রমিকে সহযোগিতা ছাড়া এ অগ্রগতি সম্ভব হতো না।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ দীর্ঘমেয়াদি। একটি সামিট করে কেউ হুট করে শত কোটি টাকা ঢেলে দেবে না। তবে একটি বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যেখান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।

বিডা চেয়ারম্যান সবশেষ বলেন, আমাদের ওপর বিশ্বাস না থাকলে সরাসরি প্রশ্ন করুন। ভুল তথ্য ছড়ালে কেউ লাভবান হয় না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

শুধু প্রেজেন্টেশন নয়, কাজও চলছে : আশিক চৌধুরী

Update Time : 08:35:34 am, Sunday, 8 June 2025

সরকারের বর্তমান মেয়াদ প্রায় দশ মাস। এর মধ্যে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে নীতিগত সংস্কার ও নানামুখী বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানিয়েছেন, ‘শুধু প্রেজেন্টেশন নয়, কাজও চলছে’। তিনি এক স্ট্যাটাসে বিডা–বেজার গত আট মাসের কার্যক্রম তুলে ধরেছেন, যেটিকে তিনি ‘আমলনামা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

শুক্রবার (৬ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ স্টাটাস দেন তিনি।

চৌধুরী আশিক বলেন, আমরা তিনটি মূল খাতে কাজ করছি—নীতিমালা ও বাস্তবায়ন, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান এবং দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন ও বিনিয়োগ পাইপলাইন গঠন।

তিনি জানান, দেশি-বিদেশি দুই শতাধিক উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহীর (সিইও) মতামতের ভিত্তিতে ৩০টি পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ১৮টি কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এগিয়ে আছে, ৭টি কাজ সময়ানুযায়ী এগোচ্ছে এবং ৫টিতে কিছুটা পিছিয়ে আছে।

প্রতিটি কাজের অগ্রগতি জানাতে বিডা প্রতি দুই মাসে ‘স্টেট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট’ নামে ওয়েবিনার করে থাকে। এসব ওয়েবিনারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অগ্রগতির তথ্য ভাগাভাগি করা হয়।

স্ট্যাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ইতিমধ্যে ৫টি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও অন্যান্য অবকাঠামোর রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে। পরিত্যক্ত জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর পাশাপাশি সামরিক খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি ডিফেন্স ইকোনমিক জোন চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে চালু হয়েছে মাসিক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক, ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের কার্যক্রম, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এফডিআই হিটম্যাপ এবং স্টার্টার প্যাক সুবিধা। বিডায় রিসার্চ উইং, ডিজিটাল ইনভয়েসিং, গ্রিন চ্যানেল, ওয়ান স্টপ সার্ভিস পারফরম্যান্স ডেটা প্রকাশসহ মোট ১৮টি কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

DP
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক-এর ফেসবুক পোস্টের অংশবিশেষ

অগ্রগতির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের বিডা অফিসে স্থাপন, ব্যবসায়ীদের জন্য ফোকাল পারসন নির্ধারণ, কর্মীদের জন্য ডে-কেয়ার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আধুনিক ক্যান্টিন সুবিধা, বিডার নতুন ওয়েবসাইট ও কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজির উন্নয়ন করা হয়েছে।

তবে কিছু খাতে বিডা পিছিয়ে রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন নির্বাহী চেয়ারম্যান। এর মধ্যে রয়েছে প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল গঠন, ট্যাক্স রুল সংস্কার, ক্যাপিটাল রিপ্যাট্রিয়েশন নীতি পরিবর্তন, বিডার সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে সমন্বিত কৌশল তৈরি।

চৌধুরী আশিক মনে করেন, দেশের বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্টি ও আস্থা অর্জন নতুন বিনিয়োগ টানার অন্যতম প্রধান উপাদান। বিগত মাসগুলোতে ইয়ংওয়ান গ্রুপ, মেটলাইফ, শেভ্রন, লাফার্জ ও বাংলাদেশ অটোমোবাইলস–এর মতো প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধানে কাজ করেছে বিডা।

নীতিগত সংস্কারের উদাহরণ হিসেবে তিনি ফুল ও পারশিয়াল বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স পলিসি, ম্যান-মেড ফাইবারে শুল্ক হ্রাস এবং ‘নো ডিডাকশন সার্টিফিকেট’ জারি প্রক্রিয়া সহজ করার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আরও জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ইতিমধ্যে বিডা দুটি বিনিয়োগ সম্মেলন করেছে—একটি বৈশ্বিক, আরেকটি চীনকেন্দ্রিক। এতে ৬৭৫ জন বিনিয়োগকারী অংশ নেন এবং ৩০০টির বেশি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলাফল হিসেবে একটি গার্মেন্ট কারখানা, একটি এয়ারলাইন্স অ্যামেনিটি কিট প্রস্তুতকারক এবং একটি ঘড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে।

বিডার দাবি, এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়া আরও ১৫টি প্রকল্প শিগগির চূড়ান্ত হতে পারে।

সামগ্রিক মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করে চৌধুরী আশিক বলেন, আমরা যেটুকু করেছি, সেটি দলগত প্রচেষ্টার ফসল। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি, বিদেশি দূতাবাস ও কিছু প্রাইভেট খাতের অংশীদারদের বিনা পারিশ্রমিকে সহযোগিতা ছাড়া এ অগ্রগতি সম্ভব হতো না।

তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ দীর্ঘমেয়াদি। একটি সামিট করে কেউ হুট করে শত কোটি টাকা ঢেলে দেবে না। তবে একটি বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি তৈরি হয়েছে, যেখান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।

বিডা চেয়ারম্যান সবশেষ বলেন, আমাদের ওপর বিশ্বাস না থাকলে সরাসরি প্রশ্ন করুন। ভুল তথ্য ছড়ালে কেউ লাভবান হয় না।