5:22 pm, Sunday, 22 June 2025

ঈদ আনন্দে কমতি ছিল না এতিম শিশুদের

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদে শিশুরা নতুন পোশাক পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে উৎসবটি উদযাপন করে। তবে, যারা এতিম তারা এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তবু জীবন থেমে থাকে না। ঈদও আসে নিয়ম মেনে।

পরিবারের সান্নিধ্য না পেলেও এবার ঈদ আনন্দে কমতি ছিল না পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে থাকা শিশু-কিশোরীদের। ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের দেওয়া হয়েছে নতুন পোশাক, ঈদের বকশিস ও উন্নত খাবার।

শনিবার (৭ জুন) আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা-মা হারা শিশু-কিশোররা নতুন জামা-কাপড় পরে একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। তারা যেন অন্যদের মতোই ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেজন্য আহছানিয়া মিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এখানে ১৬০ জন শিশু-কিশোরী আছে। কারো বাবা নেই, কারো মা নেই, আবার কারো কারো বাবা-মা উভয়ই নেই। এসব শিশু-কিশোরের থাকা-খাওয়া, পড়ালেখাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা এখান থেকেই করা হয়।

আহছানিয়া মিশনে থাকা স্বপন নামে এক শিশু জানায়, তার বাবা-মা কেউ নাই। গতকাল তাকে নতুন কাপড় দেওয়া হয়েছে। সকালে সেমাই, মুড়ি খেতে দেওয়া হয়। তারপর ঈদের বকশিস দেয়। দুপুরে পোলাও, মাংস, ডালসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়।

আকাশ নামে এক শিশু বলে, এখানে আমরা সবাই অনেক মজা করে ঈদ করলাম। অনেক ভালো লাগতেছে। বাবা-মা থাকলে তাদের সাথে ঈদ করলে আরও অনেক ভালো লাগতো।

আহছানিয়া মিশনে থাকা দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. বিপ্লব বাবু বলেন, আমি দীর্ঘ দশ বছর ধরে এখানে আছি। এখানেই আমার বিশটি ঈদ কেটেছে। আমাদের এখানে ঈদ খুব ভালোই হয় ছোট ভাই, বড় ভাই সবাই একসাথে ঈদ করেছি। কিন্তু আমার পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারলে ভালো লাগতো। বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। পরিবারের অভাব অনটনের কারণে এইখানে আমি আছি, ভালোই আছি। এখানে একসাথে সমবাই ঈদ উদযাপন করে ভালো লাগতেছে।

পারভেজ নামে এক শিশু বলেন, আমার মা আমাকে এখানে এনে দিয়েছে। এরপর আর দেখা করতে আসেনাই। মায়ের সাথে ঈদ করতে আমার খুব ইচ্ছা করতেছে।

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সমাজকর্মী ইউসুফ আলী বলেন, আমরা আমাদের শিশু নগরীতে যে সকল শিশু নিয়ে আসছি। এগুলো দেশের বিভিন্ন বস্তি, রেল স্টেশন এবং পুলিশ স্টেশনে যেসব হারানো শিশু মানুষ জমা দেয়। তাদেরকে আমরা এনে আমাদের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে ভর্তি করে তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মৌলিক যে চাহিদাগুলো রয়েছে সকল চাহিদা পূরণ করে তাদেরকে ১৮ বছর পর্যন্ত সাপোর্ট দেই। এটা মূলত আমাদের ঢাকা আহছানিয়া মিশন হেড অফিস থেকে সমস্ত শিশুদের ব্যয়ভার বহন করা হয়। পরিবারে শিশুরা যেভাবে বেড়ে উঠে, ঠিক সেভাবে আমরা শিশুদের বেড়ে উঠাতে চেষ্টা করি।

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর কৃষি ম্যানেজার সেলিম প্রধান বলেন, আজকে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এই শিশু নগরীতে একটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সুন্দরভাবে আমরা শিশুদের নিয়ে ঈদ পালন করতে পেরেছি। আমাদের এখানে ১৬০ জন শিশু-কিশোর আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

ঈদ আনন্দে কমতি ছিল না এতিম শিশুদের

Update Time : 05:30:12 am, Sunday, 8 June 2025

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদে শিশুরা নতুন পোশাক পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে উৎসবটি উদযাপন করে। তবে, যারা এতিম তারা এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তবু জীবন থেমে থাকে না। ঈদও আসে নিয়ম মেনে।

পরিবারের সান্নিধ্য না পেলেও এবার ঈদ আনন্দে কমতি ছিল না পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে থাকা শিশু-কিশোরীদের। ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের দেওয়া হয়েছে নতুন পোশাক, ঈদের বকশিস ও উন্নত খাবার।

শনিবার (৭ জুন) আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা-মা হারা শিশু-কিশোররা নতুন জামা-কাপড় পরে একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। তারা যেন অন্যদের মতোই ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেজন্য আহছানিয়া মিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এখানে ১৬০ জন শিশু-কিশোরী আছে। কারো বাবা নেই, কারো মা নেই, আবার কারো কারো বাবা-মা উভয়ই নেই। এসব শিশু-কিশোরের থাকা-খাওয়া, পড়ালেখাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা এখান থেকেই করা হয়।

আহছানিয়া মিশনে থাকা স্বপন নামে এক শিশু জানায়, তার বাবা-মা কেউ নাই। গতকাল তাকে নতুন কাপড় দেওয়া হয়েছে। সকালে সেমাই, মুড়ি খেতে দেওয়া হয়। তারপর ঈদের বকশিস দেয়। দুপুরে পোলাও, মাংস, ডালসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়।

আকাশ নামে এক শিশু বলে, এখানে আমরা সবাই অনেক মজা করে ঈদ করলাম। অনেক ভালো লাগতেছে। বাবা-মা থাকলে তাদের সাথে ঈদ করলে আরও অনেক ভালো লাগতো।

আহছানিয়া মিশনে থাকা দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. বিপ্লব বাবু বলেন, আমি দীর্ঘ দশ বছর ধরে এখানে আছি। এখানেই আমার বিশটি ঈদ কেটেছে। আমাদের এখানে ঈদ খুব ভালোই হয় ছোট ভাই, বড় ভাই সবাই একসাথে ঈদ করেছি। কিন্তু আমার পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারলে ভালো লাগতো। বাস্তবতা মেনে নিতে হয়। পরিবারের অভাব অনটনের কারণে এইখানে আমি আছি, ভালোই আছি। এখানে একসাথে সমবাই ঈদ উদযাপন করে ভালো লাগতেছে।

পারভেজ নামে এক শিশু বলেন, আমার মা আমাকে এখানে এনে দিয়েছে। এরপর আর দেখা করতে আসেনাই। মায়ের সাথে ঈদ করতে আমার খুব ইচ্ছা করতেছে।

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সমাজকর্মী ইউসুফ আলী বলেন, আমরা আমাদের শিশু নগরীতে যে সকল শিশু নিয়ে আসছি। এগুলো দেশের বিভিন্ন বস্তি, রেল স্টেশন এবং পুলিশ স্টেশনে যেসব হারানো শিশু মানুষ জমা দেয়। তাদেরকে আমরা এনে আমাদের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে ভর্তি করে তাদের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মৌলিক যে চাহিদাগুলো রয়েছে সকল চাহিদা পূরণ করে তাদেরকে ১৮ বছর পর্যন্ত সাপোর্ট দেই। এটা মূলত আমাদের ঢাকা আহছানিয়া মিশন হেড অফিস থেকে সমস্ত শিশুদের ব্যয়ভার বহন করা হয়। পরিবারে শিশুরা যেভাবে বেড়ে উঠে, ঠিক সেভাবে আমরা শিশুদের বেড়ে উঠাতে চেষ্টা করি।

আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর কৃষি ম্যানেজার সেলিম প্রধান বলেন, আজকে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে এই শিশু নগরীতে একটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সুন্দরভাবে আমরা শিশুদের নিয়ে ঈদ পালন করতে পেরেছি। আমাদের এখানে ১৬০ জন শিশু-কিশোর আছে।