9:39 pm, Sunday, 22 June 2025

সাংবাদিক যেভাবে উৎসব পালন করে

সাংবাদিকতা পেশা ও শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বই হলো—দ্য কমপ্লিট রিপোর্টার (The Complete Reporter)। জুলিয়ান হ্যারিস (Julian Harris), স্ট্যানলি জনসন (Stanley Johnson) ও কেইলি লেইটার (Kelly Leiter) রচিত এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে।

বর্তমানে বইটির ১৮-তম সংস্করণ বাজারে আছে। এই বইয়ে এইজন সাংবাদিকের নানা গুণাবলী, দায়িত্ব-কর্তব্য ও ঘটনা কাভারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, একজন সাংবাদিকের অন্যতম বড় গুণাবলী হলো অদম্য আগ্রহ (Insatiable Curiosity)। সে আগ্রহ হতে পারে রাজনীতি, অর্থনীতি, অপরাধ, জীবন-যাপন, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এমনকি নানা উৎসব আয়োজন।

উৎসব আয়োজন মানব জীবনের অনুষঙ্গ। Qualification of a reporter উপ-অধ্যায়ে আরও উল্লেখ আছে একজন সাংবাদিককে হতে হয় চূড়ান্ত রকমের সহনশীল। আর বইটিতে সাংবাদিকের নিত্যদিনের কার্যাবলীর ব্যাখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে, একজন প্রতিবেদককে প্রতিনিয়ত আনকোরা সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। যা অন্য অনেক পেশায় প্রযোজ্য নয়।

সাংবাদিকের কাজের মধ্যে থাকে মৃত্যু, বিপর্যয়, ধ্বংস, আনন্দ-বিষাদ নানা কিছু। থাকে উৎসব আয়োজনের নানা অনুষঙ্গও। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, গণমাধ্যমে উৎসব আয়োজনে খবর সম্প্রচার বা প্রকাশ অপরিহার্য। যা একটি সংবাদ মাধ্যমের সংবাদে রঙ ছড়াতে পারে। আবার উৎসব আয়োজনের কোনো মানবিক গল্প মন ছুঁয়ে যেতে পারে হাজারও পাঠক-দর্শকের।

সাংবাদিকের কাজের মধ্যে থাকে মৃত্যু, বিপর্যয়, ধ্বংস, আনন্দ-বিষাদ নানা কিছু। থাকে উৎসব আয়োজনের নানা অনুষঙ্গও। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, গণমাধ্যমে উৎসব আয়োজনে খবর সম্প্রচার বা প্রকাশ অপরিহার্য। যা একটি সংবাদ মাধ্যমের সংবাদে রঙ ছড়াতে পারে।

সাংবাদিকতা পেশায় আরও একটি দর্শনতত্ত্ব প্রযোজ্য। বলা হয়ে থাকে একজন সাংবাদিক হবেন সবজান্তা। বিভিন্ন আগ্রহ থাকবে, জ্ঞান থাকবে, পদচারণা থাকবে। তাই পূজা পার্বণে সাংবাদিক নিষ্ক্রিয় থাকবেন, অর্পিত কোনো দায়িত্ব অবহেলা করবেন অথবা ঈদে হিন্দু বা অন্য ধর্মের কেউ উৎসব সংক্রান্ত কোনো কাজ করবেন না- সেটা কাম্য নয়। তবে সাংবাদিককে আবার একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হয়। যাকে একাডিমক ভাষায় বলে, Jack of all trades master of one.

সাংবাদিকের উৎসবের দিনে ফেরা যাক। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর (UNESCO) ভাষ্য অনুযায়ী, সমাজের জন্য সাংবাদিকতা হলো অতি জরুরি সেবা। তাই উৎসব আয়োজন এমনকি কোভিডের মতো অতি মহামারিতেও সংবাদমাধ্যম বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। তাই পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা, বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বড়দিনের উৎসবে পৃথিবীর কোথাও গণমাধ্যম বন্ধ থাকে না।

সাধারণত বড় উৎসবে সংবাদ মাধ্যমে শ্রম বিভাগ প্রয়োগ করে অফিস চালু রাখতে হয়। খুবই স্বাভাবিক নিয়ম, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংবাদকর্মীরা ঈদের মধ্যে এক ঈদ পরিবারের সাথে উপভোগ করার সুযোগ পান। বাকিটা ব্যস্ত থাকতে হয় অফিসের কাজে।

এখন আসা যাক দায়িত্বের কথায়। বাংলাদেশে অনেক মুসলিম সাংবাদিক আছেন যারা দুর্গাপূজার পুরো আয়োজন কাভার করে থাকেন। ভোররাতে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা থেকে শুরু করে দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত টানা সংবাদ সংগ্রহ ও সম্প্রচারে যুক্ত থাকেন। আবার হিন্দু সম্প্রচারের অনেকেই আছেন যারা ঈদের নামাজ, উৎসব আয়োজন কাভার করে থাকেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

তাই এ কথা পরিষ্কার করে বলা যায়, সমাজের অতি জরুরি সেবার অংশ হিসেবে একজন সাংবাদিক ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে, দায়িত্ব পালন করতে হয়ও, এই দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নেই।

এছাড়া উৎসব আয়োজনের সময় যদি বড় কোনো বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা ঘটে তখন ছুটিতে থাকা সাংবাদিককেও জরুরি ভিত্তিতে অফিসের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। এখানে একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, একজন সাংবাদিক যেখানেই থাকুন না কেন, ছুটিতেই থাকুন না কেন জরুরি প্রয়োজনে তাকে অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হয়।

যেমন বাংলাদেশের যুদ্ধদিনের বন্ধু সায়মন জন ড্রিং ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কর্মরত ছিলেন কম্বোডিয়ায়। সেখানে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সংঘাতের সংবাদ তিনি সংগ্রহ করছিলেন। তবে দ্য টেলিগ্রাফের এডিটর ১ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় ঢাকার গণআন্দোলনের কথা বলে তাকে ঢাকায় যেতে বলেছিলেন।

বাংলাদেশের যুদ্ধদিনের বন্ধু সায়মন জন ড্রিং ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কর্মরত ছিলেন কম্বোডিয়ায়। সেখানে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সংঘাতের সংবাদ তিনি সংগ্রহ করছিলেন। তবে দ্য টেলিগ্রাফের এডিটর ১ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় ঢাকার গণআন্দোলনের কথা বলে তাকে ঢাকায় যেতে বলেছিলেন।

সায়মন জন ড্রিংক বিনা বাক্য ব্যয়ে নমপেন থেকে ঢাকার বিমান ধরেছিলেন। অফিসের চাহিদা অনুযায়ী, যেকোনো দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকা একটা বড় গুণাবলী। হ্যাঁ, তখন উৎসব ছিল না কিন্তু মোদ্দা কথা হচ্ছে অফিসের প্রয়োজনে সংবাদকর্মী সব সময় দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত থাকবেন। এটা কাঙ্ক্ষিত চর্চা।

উৎসব আয়োজনে নানা ধরনের অতি জরুরি দায়িত্ব পালন ও উপভোগের পাশাপাশি একটি জরুরি বিষয় যুক্ত। যা হলো সাংবাদিকের প্রাপ্য উৎসব ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অধিকতর কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। অনেক গণমাধ্যমের মালিকানা ও সম্পাদকীয় কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে। নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সংকুচিত হয়েছে বিজ্ঞাপনের বাজার। নতুন প্রেক্ষাপটে যা জরুরি তা হলো, সাংবাদিকদের উৎসবভাতা নিশ্চিত করা। যা কোনোভাবেই বন্ধ করা উচিত নয়।

বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে সাংবাদিকদের এই আর্থিক অনিশ্চয়তা খুব নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। এটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিসরকে নানাভাবে প্রভাবিত করে আসছে। অনেকই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন, অনেকেই আবার বাঁচার তাগিদে অসাধু উপায় অবলম্বন করছেন। যা পুরো গণমাধ্যম পরিসরকে দূষণীয় করে তুলছে।

সম্প্রতি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে বেশকিছু কার্যকর প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো কার্যকর হলে হয়তো, অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। যদিও তা খুবই ধীরগতির ও কঠিন হবে বলে অনেকের ধারণা।

উৎসব আয়োজন অন্যান্য জরুরি সেবায় নিযুক্ত পেশাজীবীর মতো একজন সংবাদকর্মীও অনেক ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজন ছাড়া বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে। দিন শেষে তা এক ধরনের ত্যাগ-ই বলা যায়। উৎসবে এই ত্যাগ স্বীকার করে যারা সমাজের জন্য অতি জরুরি দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাদের বেতন, উৎসব ভাতা, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি ও যথাযথ হোক সেই কামনা সবসময়।

রাহাত মিনহাজ ।। সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সাংবাদিক যেভাবে উৎসব পালন করে

Update Time : 01:41:08 am, Monday, 9 June 2025

সাংবাদিকতা পেশা ও শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বই হলো—দ্য কমপ্লিট রিপোর্টার (The Complete Reporter)। জুলিয়ান হ্যারিস (Julian Harris), স্ট্যানলি জনসন (Stanley Johnson) ও কেইলি লেইটার (Kelly Leiter) রচিত এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে।

বর্তমানে বইটির ১৮-তম সংস্করণ বাজারে আছে। এই বইয়ে এইজন সাংবাদিকের নানা গুণাবলী, দায়িত্ব-কর্তব্য ও ঘটনা কাভারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, একজন সাংবাদিকের অন্যতম বড় গুণাবলী হলো অদম্য আগ্রহ (Insatiable Curiosity)। সে আগ্রহ হতে পারে রাজনীতি, অর্থনীতি, অপরাধ, জীবন-যাপন, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এমনকি নানা উৎসব আয়োজন।

উৎসব আয়োজন মানব জীবনের অনুষঙ্গ। Qualification of a reporter উপ-অধ্যায়ে আরও উল্লেখ আছে একজন সাংবাদিককে হতে হয় চূড়ান্ত রকমের সহনশীল। আর বইটিতে সাংবাদিকের নিত্যদিনের কার্যাবলীর ব্যাখ্যায় তুলে ধরা হয়েছে, একজন প্রতিবেদককে প্রতিনিয়ত আনকোরা সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। যা অন্য অনেক পেশায় প্রযোজ্য নয়।

সাংবাদিকের কাজের মধ্যে থাকে মৃত্যু, বিপর্যয়, ধ্বংস, আনন্দ-বিষাদ নানা কিছু। থাকে উৎসব আয়োজনের নানা অনুষঙ্গও। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, গণমাধ্যমে উৎসব আয়োজনে খবর সম্প্রচার বা প্রকাশ অপরিহার্য। যা একটি সংবাদ মাধ্যমের সংবাদে রঙ ছড়াতে পারে। আবার উৎসব আয়োজনের কোনো মানবিক গল্প মন ছুঁয়ে যেতে পারে হাজারও পাঠক-দর্শকের।

সাংবাদিকের কাজের মধ্যে থাকে মৃত্যু, বিপর্যয়, ধ্বংস, আনন্দ-বিষাদ নানা কিছু। থাকে উৎসব আয়োজনের নানা অনুষঙ্গও। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, গণমাধ্যমে উৎসব আয়োজনে খবর সম্প্রচার বা প্রকাশ অপরিহার্য। যা একটি সংবাদ মাধ্যমের সংবাদে রঙ ছড়াতে পারে।

সাংবাদিকতা পেশায় আরও একটি দর্শনতত্ত্ব প্রযোজ্য। বলা হয়ে থাকে একজন সাংবাদিক হবেন সবজান্তা। বিভিন্ন আগ্রহ থাকবে, জ্ঞান থাকবে, পদচারণা থাকবে। তাই পূজা পার্বণে সাংবাদিক নিষ্ক্রিয় থাকবেন, অর্পিত কোনো দায়িত্ব অবহেলা করবেন অথবা ঈদে হিন্দু বা অন্য ধর্মের কেউ উৎসব সংক্রান্ত কোনো কাজ করবেন না- সেটা কাম্য নয়। তবে সাংবাদিককে আবার একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হয়। যাকে একাডিমক ভাষায় বলে, Jack of all trades master of one.

সাংবাদিকের উৎসবের দিনে ফেরা যাক। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনেস্কোর (UNESCO) ভাষ্য অনুযায়ী, সমাজের জন্য সাংবাদিকতা হলো অতি জরুরি সেবা। তাই উৎসব আয়োজন এমনকি কোভিডের মতো অতি মহামারিতেও সংবাদমাধ্যম বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। তাই পহেলা বৈশাখ, ঈদ, পূজা, বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বড়দিনের উৎসবে পৃথিবীর কোথাও গণমাধ্যম বন্ধ থাকে না।

সাধারণত বড় উৎসবে সংবাদ মাধ্যমে শ্রম বিভাগ প্রয়োগ করে অফিস চালু রাখতে হয়। খুবই স্বাভাবিক নিয়ম, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংবাদকর্মীরা ঈদের মধ্যে এক ঈদ পরিবারের সাথে উপভোগ করার সুযোগ পান। বাকিটা ব্যস্ত থাকতে হয় অফিসের কাজে।

এখন আসা যাক দায়িত্বের কথায়। বাংলাদেশে অনেক মুসলিম সাংবাদিক আছেন যারা দুর্গাপূজার পুরো আয়োজন কাভার করে থাকেন। ভোররাতে মহালয়ার আনুষ্ঠানিকতা থেকে শুরু করে দশমীর বিসর্জন পর্যন্ত টানা সংবাদ সংগ্রহ ও সম্প্রচারে যুক্ত থাকেন। আবার হিন্দু সম্প্রচারের অনেকেই আছেন যারা ঈদের নামাজ, উৎসব আয়োজন কাভার করে থাকেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।

তাই এ কথা পরিষ্কার করে বলা যায়, সমাজের অতি জরুরি সেবার অংশ হিসেবে একজন সাংবাদিক ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে, দায়িত্ব পালন করতে হয়ও, এই দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নেই।

এছাড়া উৎসব আয়োজনের সময় যদি বড় কোনো বিপর্যয় বা দুর্ঘটনা ঘটে তখন ছুটিতে থাকা সাংবাদিককেও জরুরি ভিত্তিতে অফিসের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়। এখানে একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, একজন সাংবাদিক যেখানেই থাকুন না কেন, ছুটিতেই থাকুন না কেন জরুরি প্রয়োজনে তাকে অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হয়।

যেমন বাংলাদেশের যুদ্ধদিনের বন্ধু সায়মন জন ড্রিং ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কর্মরত ছিলেন কম্বোডিয়ায়। সেখানে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সংঘাতের সংবাদ তিনি সংগ্রহ করছিলেন। তবে দ্য টেলিগ্রাফের এডিটর ১ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় ঢাকার গণআন্দোলনের কথা বলে তাকে ঢাকায় যেতে বলেছিলেন।

বাংলাদেশের যুদ্ধদিনের বন্ধু সায়মন জন ড্রিং ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে কর্মরত ছিলেন কম্বোডিয়ায়। সেখানে কমিউনিস্ট বিদ্রোহীদের সংঘাতের সংবাদ তিনি সংগ্রহ করছিলেন। তবে দ্য টেলিগ্রাফের এডিটর ১ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় ঢাকার গণআন্দোলনের কথা বলে তাকে ঢাকায় যেতে বলেছিলেন।

সায়মন জন ড্রিংক বিনা বাক্য ব্যয়ে নমপেন থেকে ঢাকার বিমান ধরেছিলেন। অফিসের চাহিদা অনুযায়ী, যেকোনো দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকা একটা বড় গুণাবলী। হ্যাঁ, তখন উৎসব ছিল না কিন্তু মোদ্দা কথা হচ্ছে অফিসের প্রয়োজনে সংবাদকর্মী সব সময় দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত থাকবেন। এটা কাঙ্ক্ষিত চর্চা।

উৎসব আয়োজনে নানা ধরনের অতি জরুরি দায়িত্ব পালন ও উপভোগের পাশাপাশি একটি জরুরি বিষয় যুক্ত। যা হলো সাংবাদিকের প্রাপ্য উৎসব ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অধিকতর কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। অনেক গণমাধ্যমের মালিকানা ও সম্পাদকীয় কাঠামো পরিবর্তিত হয়েছে। নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সংকুচিত হয়েছে বিজ্ঞাপনের বাজার। নতুন প্রেক্ষাপটে যা জরুরি তা হলো, সাংবাদিকদের উৎসবভাতা নিশ্চিত করা। যা কোনোভাবেই বন্ধ করা উচিত নয়।

বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে সাংবাদিকদের এই আর্থিক অনিশ্চয়তা খুব নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। এটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম পরিসরকে নানাভাবে প্রভাবিত করে আসছে। অনেকই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন, অনেকেই আবার বাঁচার তাগিদে অসাধু উপায় অবলম্বন করছেন। যা পুরো গণমাধ্যম পরিসরকে দূষণীয় করে তুলছে।

সম্প্রতি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে বেশকিছু কার্যকর প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো কার্যকর হলে হয়তো, অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। যদিও তা খুবই ধীরগতির ও কঠিন হবে বলে অনেকের ধারণা।

উৎসব আয়োজন অন্যান্য জরুরি সেবায় নিযুক্ত পেশাজীবীর মতো একজন সংবাদকর্মীও অনেক ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজন ছাড়া বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করে থাকে। দিন শেষে তা এক ধরনের ত্যাগ-ই বলা যায়। উৎসবে এই ত্যাগ স্বীকার করে যারা সমাজের জন্য অতি জরুরি দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাদের বেতন, উৎসব ভাতা, বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি ও যথাযথ হোক সেই কামনা সবসময়।

রাহাত মিনহাজ ।। সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়