11:20 pm, Sunday, 22 June 2025

খুলনা টাইগার্সের মালিকের বিরুদ্ধে ভ্রূণ হত্যা মামলা প্রত্যাহার

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল খুলনা টাইগার্সের মালিক ইকবাল আল মাহমুদসহ চারজনের বিরুদ্ধে ভ্রুণ হত্যা ও যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে মামলাটি আপসের শর্ত পূরণে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বাদীপক্ষের আইনজীবী মহিমা বাঁধন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষ আপসনামা দাখিল করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালত আপসের শর্ত অনুযায়ী গতকাল মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন।

আপসনামায় বলা হয়, আসামি ইকবাল আল মাহমুদ বাদীকে ২৫ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে দেবেন। সমঝোতা অনুযায়ী বাদী ৩ জুন চেক বাবদ টাকা প্রাপ্ত হয়েছেন। বাদীর সঙ্গে আসামি ইকবালের প্রেমের সম্পর্ক পরে বিয়ে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপড়েন ও শারীরিক নির্যাতনের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। উভয় পক্ষের আইনজীবী এবং আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে শর্ত সাপেক্ষে আপসনামা দাখিল করা হলো। এছাড়া বিগত দিনের ঘটনাবলি নিয়ে ভবিষ্যতে উভয়পক্ষ কোনো প্রকার ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা দায়ের করবেন না।

গত ১ জুন বিকেলে খুলনা টাইগার্সের মালিক ইকবাল আল মাহমুদ এবং তার প্রথম স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরদিন তাদের আদালতে হাজির করা হলে দুইপক্ষ আপস করবেন বলে জানান। আপসের শর্ত পূরণ করতে আদালত আসামিদের দুদিনের জামিন দেন। আপসের শর্ত পূরণ করায় আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মামলার বাদী ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রথম বিয়ে করেন। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর ওই বিয়ের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়। পরে ২০২১ সালে আসামির সাথে বাদীর পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি বাদী এবং আসামি ৩০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ‘রয়েল টিউলিপ হোটেল’ কক্সবাজার এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বাদীকে সে বিভিন্ন ধরনের মানসিক অত্যাচার করেন। পরে বিয়ের প্রায় ৭ মাস পর বাদীর নিজের গর্ভে সন্তানের আসলে আসামি গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। বাদী গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় আসামি তাকে মারধর এবং মানসিক অত্যাচার শুরু করে।

পরবর্তী সময়ে আসামি বাদীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক হাসপাতালে ভর্তি করে এবং গর্ভপাত করায়। বাদীর অপারেশনের কারণে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে দাম্পত্য জীবন চলাকালীন অবস্থায় আসামি তার ‘খুলনা টাইগার্স’ নামক বিপিএল খেলায় টিম পরিচালনা অর্থাৎ তার ব্যবসায়িক প্রয়োজনের কথা বলে যৌতুক হিসেবে টাকা দাবি করেন। বাদীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকা এবং স্বর্ণালংকার বিক্রি করে যৌতুকের টাকা দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দিতে থাকে এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাদী নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সর্বসাকুল্যে ১৮ লাখ টাকা টাকা যৌতুক দেয়। এর মধ্যেই মামলার বাদী জানতে পারেন আসামির পূর্বের বউয়েল সাথে বৈবাহিক অবস্থা বিদ্যমান আছে এবং তার ২টি বাচ্চা আছে। আসামির মিথ্যাবাদী তার এরূপ চরম অবস্থার কারণে বাদী তার সাথে সংসার করবেন না বলে জানান এবং যৌতুক হিসেবে নেওয়া টাকা ফেরত চায় ও মোহরানা দাবি করে।

আসামি বাদীকে সংসার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন ও নতুন করে আরও ১০ লাখ যৌতুক টাকা যৌতুক দাবি করে এবং সংসার না করলে বিভিন্ন সময়ে তোলা দাম্পত্য সম্পর্কের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করবেন বলে হুমকি প্রদান করেন।

২০২৫ সালের ১ মে সর্বশেষ ঘটনার দিন বাদী আসামির গুলশানের বাসার সামনে গেলে তিনি দেখতে পান ইকবালসহ বাকি আসামিরা একসাথে গল্প করছেন। বাদী তার স্বামীর কাছে গিয়ে বিয়ের কাবিননামা ও তাহার যৌতুক বাবদ প্রদানকৃত টাকা ফেরত চাইলে তৎক্ষণাৎ বাদীকে অত্যন্ত বাজে ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং সজোরে থাপ্পড় মারে এবং হুমকি দিয়ে বলেন, কাবিননামা ও টাকা চাইলে তোর হাত পা ভেঙে দেবো, জীবনে মেরে ফেলবো, পরপারে পাঠিয়ে দেব। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

খুলনা টাইগার্সের মালিকের বিরুদ্ধে ভ্রূণ হত্যা মামলা প্রত্যাহার

Update Time : 08:42:59 am, Sunday, 8 June 2025

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দল খুলনা টাইগার্সের মালিক ইকবাল আল মাহমুদসহ চারজনের বিরুদ্ধে ভ্রুণ হত্যা ও যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে মামলাটি আপসের শর্ত পূরণে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বাদীপক্ষের আইনজীবী মহিমা বাঁধন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষ আপসনামা দাখিল করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালত আপসের শর্ত অনুযায়ী গতকাল মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন।

আপসনামায় বলা হয়, আসামি ইকবাল আল মাহমুদ বাদীকে ২৫ লাখ টাকা ঢাকা ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে দেবেন। সমঝোতা অনুযায়ী বাদী ৩ জুন চেক বাবদ টাকা প্রাপ্ত হয়েছেন। বাদীর সঙ্গে আসামি ইকবালের প্রেমের সম্পর্ক পরে বিয়ে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপড়েন ও শারীরিক নির্যাতনের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেন। উভয় পক্ষের আইনজীবী এবং আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে শর্ত সাপেক্ষে আপসনামা দাখিল করা হলো। এছাড়া বিগত দিনের ঘটনাবলি নিয়ে ভবিষ্যতে উভয়পক্ষ কোনো প্রকার ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা দায়ের করবেন না।

গত ১ জুন বিকেলে খুলনা টাইগার্সের মালিক ইকবাল আল মাহমুদ এবং তার প্রথম স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরদিন তাদের আদালতে হাজির করা হলে দুইপক্ষ আপস করবেন বলে জানান। আপসের শর্ত পূরণ করতে আদালত আসামিদের দুদিনের জামিন দেন। আপসের শর্ত পূরণ করায় আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মামলার বাদী ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রথম বিয়ে করেন। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর ওই বিয়ের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়। পরে ২০২১ সালে আসামির সাথে বাদীর পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি বাদী এবং আসামি ৩০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে ‘রয়েল টিউলিপ হোটেল’ কক্সবাজার এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বাদীকে সে বিভিন্ন ধরনের মানসিক অত্যাচার করেন। পরে বিয়ের প্রায় ৭ মাস পর বাদীর নিজের গর্ভে সন্তানের আসলে আসামি গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। বাদী গর্ভপাতে রাজি না হওয়ায় আসামি তাকে মারধর এবং মানসিক অত্যাচার শুরু করে।

পরবর্তী সময়ে আসামি বাদীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক হাসপাতালে ভর্তি করে এবং গর্ভপাত করায়। বাদীর অপারেশনের কারণে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে দাম্পত্য জীবন চলাকালীন অবস্থায় আসামি তার ‘খুলনা টাইগার্স’ নামক বিপিএল খেলায় টিম পরিচালনা অর্থাৎ তার ব্যবসায়িক প্রয়োজনের কথা বলে যৌতুক হিসেবে টাকা দাবি করেন। বাদীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকা এবং স্বর্ণালংকার বিক্রি করে যৌতুকের টাকা দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দিতে থাকে এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাদী নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সর্বসাকুল্যে ১৮ লাখ টাকা টাকা যৌতুক দেয়। এর মধ্যেই মামলার বাদী জানতে পারেন আসামির পূর্বের বউয়েল সাথে বৈবাহিক অবস্থা বিদ্যমান আছে এবং তার ২টি বাচ্চা আছে। আসামির মিথ্যাবাদী তার এরূপ চরম অবস্থার কারণে বাদী তার সাথে সংসার করবেন না বলে জানান এবং যৌতুক হিসেবে নেওয়া টাকা ফেরত চায় ও মোহরানা দাবি করে।

আসামি বাদীকে সংসার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন ও নতুন করে আরও ১০ লাখ যৌতুক টাকা যৌতুক দাবি করে এবং সংসার না করলে বিভিন্ন সময়ে তোলা দাম্পত্য সম্পর্কের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করবেন বলে হুমকি প্রদান করেন।

২০২৫ সালের ১ মে সর্বশেষ ঘটনার দিন বাদী আসামির গুলশানের বাসার সামনে গেলে তিনি দেখতে পান ইকবালসহ বাকি আসামিরা একসাথে গল্প করছেন। বাদী তার স্বামীর কাছে গিয়ে বিয়ের কাবিননামা ও তাহার যৌতুক বাবদ প্রদানকৃত টাকা ফেরত চাইলে তৎক্ষণাৎ বাদীকে অত্যন্ত বাজে ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং সজোরে থাপ্পড় মারে এবং হুমকি দিয়ে বলেন, কাবিননামা ও টাকা চাইলে তোর হাত পা ভেঙে দেবো, জীবনে মেরে ফেলবো, পরপারে পাঠিয়ে দেব। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী।