11:24 pm, Sunday, 22 June 2025

আলট্রাসনোগ্রাম হয় না ঠাকুরগাঁও ২৫০ বিশিষ্ট শয্যার জেনারেল হাসপাতালে

সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের মুন্সীপাড়া থেকে বৃদ্ধ আমিনুল ইসলাম মেয়েকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন আলট্রাসনোগ্রামের জন্য। কিন্তু এসে দেখেন কক্ষে সবই আছে, শুধু চিকিৎসক নেই। ক্ষোভ নিয়ে বললেন এতো বড় হাসপাতাল করে লাভ কী? যদি সময়মতো চিকিৎসা না পাই। আমাদের মতো গরিব মানুষদের টাকা-পয়সা নেই বলেই তো সরকারি হাসপাতালে আসি স্বল্প মূল্যের চিকিৎসা করাতে। কিন্তু এখানে দেখি সবই আছে চিকিৎসক নেই।

জেনারেল হাসপাতালে দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাম সেবা। হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকলেও নেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী বাধ্য হচ্ছেন বাইরে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সেবা নিতে, যেখানে খরচ পড়ছে সরকারি নির্ধারিত ফি’র কয়েকগুণ বেশি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সরকারি ফি অনুযায়ী পুরো পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করতে খরচ হয় ২২০ টাকা এবং আংশিক পেটের জন্য ১১০ টাকা। অথচ বাইরে এই সেবা নিতে গিয়ে দিতে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুর রাসেল পেটব্যথা নিয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম করতে গেলে জানতে পারেন, সেবা বন্ধ রয়েছে। নামজুল হোসেন বলেন, হাসপাতালে এসে শুনলাম আলট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে না। পরে বাইরে গিয়ে ১২০০ টাকা খরচ করে করতে হয়েছে। অথচ সরকারি হতো ২২০ টাকায়। আমরা গরিব মানুষ, সরকারি হাসপাতালই ভরসা। সেটাই যদি না চলে, তাহলে কী করব?

সম্প্রতি, সরেজমিনে রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু অবস্থায় রয়েছে। চিকিৎসকের ডেস্কে রয়েছে কম্পিউটার, ফটোকপিয়ারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। তবে কক্ষের দরজায় টাঙানো নোটিশে লেখা- চিকিৎসক না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।

রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে আসা আনজুম বেগম বলেন, মেয়েটা তিন দিন ধরে পেটব্যথায় ভুগছে। ৩০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। এখন শুনছি বাইরে গেলে এক হাজার টাকা লাগবে। এতো টাকা কোথা থেকে আসবে?

হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের ইনচার্জ আব্দুর রব চৌধুরী বলেন, দেড় মাস ধরে এখানে কোনো সনোলজিস্ট নেই। এর আগে একজন মেডিকেল অফিসার প্রেশনে এসে সপ্তাহে তিন দিন সেবা দিতেন। তার প্রেশন প্রত্যাহার হওয়ায় সেবাটি বন্ধ হয়ে গেছে।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালে হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম সেবা চালু হয়। কিন্তু সনোলজিস্ট না থাকায় বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আবুল বাশার মো. সায়েদুজ্জামান বলেন, আগে যিনি সেবা দিতেন, সেই বালিয়াডাঙ্গীর মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ আজমির রাসেলকে আবারও প্রেশনে আনার চেষ্টা চলছে। তবে সারা দেশেই সনোলজিস্ট সংকট রয়েছে, ফলে স্থায়ীভাবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আলট্রাসনোগ্রাম হয় না ঠাকুরগাঁও ২৫০ বিশিষ্ট শয্যার জেনারেল হাসপাতালে

Update Time : 05:49:51 am, Sunday, 8 June 2025

সদর উপজেলা আকচা ইউনিয়নের মুন্সীপাড়া থেকে বৃদ্ধ আমিনুল ইসলাম মেয়েকে নিয়ে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন আলট্রাসনোগ্রামের জন্য। কিন্তু এসে দেখেন কক্ষে সবই আছে, শুধু চিকিৎসক নেই। ক্ষোভ নিয়ে বললেন এতো বড় হাসপাতাল করে লাভ কী? যদি সময়মতো চিকিৎসা না পাই। আমাদের মতো গরিব মানুষদের টাকা-পয়সা নেই বলেই তো সরকারি হাসপাতালে আসি স্বল্প মূল্যের চিকিৎসা করাতে। কিন্তু এখানে দেখি সবই আছে চিকিৎসক নেই।

জেনারেল হাসপাতালে দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আলট্রাসনোগ্রাম সেবা। হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকলেও নেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী বাধ্য হচ্ছেন বাইরে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে সেবা নিতে, যেখানে খরচ পড়ছে সরকারি নির্ধারিত ফি’র কয়েকগুণ বেশি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সরকারি ফি অনুযায়ী পুরো পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করতে খরচ হয় ২২০ টাকা এবং আংশিক পেটের জন্য ১১০ টাকা। অথচ বাইরে এই সেবা নিতে গিয়ে দিতে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুর রাসেল পেটব্যথা নিয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম করতে গেলে জানতে পারেন, সেবা বন্ধ রয়েছে। নামজুল হোসেন বলেন, হাসপাতালে এসে শুনলাম আলট্রাসনোগ্রাম হচ্ছে না। পরে বাইরে গিয়ে ১২০০ টাকা খরচ করে করতে হয়েছে। অথচ সরকারি হতো ২২০ টাকায়। আমরা গরিব মানুষ, সরকারি হাসপাতালই ভরসা। সেটাই যদি না চলে, তাহলে কী করব?

সম্প্রতি, সরেজমিনে রেডিওলজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু অবস্থায় রয়েছে। চিকিৎসকের ডেস্কে রয়েছে কম্পিউটার, ফটোকপিয়ারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। তবে কক্ষের দরজায় টাঙানো নোটিশে লেখা- চিকিৎসক না থাকায় আলট্রাসনোগ্রাম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ।

রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে আসা আনজুম বেগম বলেন, মেয়েটা তিন দিন ধরে পেটব্যথায় ভুগছে। ৩০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। এখন শুনছি বাইরে গেলে এক হাজার টাকা লাগবে। এতো টাকা কোথা থেকে আসবে?

হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের ইনচার্জ আব্দুর রব চৌধুরী বলেন, দেড় মাস ধরে এখানে কোনো সনোলজিস্ট নেই। এর আগে একজন মেডিকেল অফিসার প্রেশনে এসে সপ্তাহে তিন দিন সেবা দিতেন। তার প্রেশন প্রত্যাহার হওয়ায় সেবাটি বন্ধ হয়ে গেছে।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালে হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম সেবা চালু হয়। কিন্তু সনোলজিস্ট না থাকায় বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন আবুল বাশার মো. সায়েদুজ্জামান বলেন, আগে যিনি সেবা দিতেন, সেই বালিয়াডাঙ্গীর মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ আজমির রাসেলকে আবারও প্রেশনে আনার চেষ্টা চলছে। তবে সারা দেশেই সনোলজিস্ট সংকট রয়েছে, ফলে স্থায়ীভাবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।